এলোমেলো



আম আদমি
        দেবাশিস মাইতি
ঘরের এক কোণে আজও ঘাপ্টি মেরে বসে,
আমারই ভুল নাকি শুধুই তোমার দোষে
আমি হারালাম ভালোবাসা---
আর কলেজের ক্যান্টিনে, ব্যোমকেশ-টিনটিনে
পি.এন.পি.সি-র মাঝে চিরুনি তল্লাশি করে
খুঁজে পায়না ঘুঘুর বাসা ।

কেউ যদি ঝেড়ে কাশে, কেউ বসে কারও পাশে,
লেগে যাবে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ ।
দলাই-মলাই চলে ফোনে, চীনে যায় অর্বাচীনে
আর তিব্বতে কাঁদে গৌতম বুদ্ধ ।

আমার কী যায় আসে তাতে, রাজনৈতিক আঁতাতে,
আমি শুধু আমার প্রেম ফেরত চাই ---
গোলাগুলি হোক সীমান্তে, আমি তোমায় যাবো আন্‌তে,
রাষ্ট্রদোহী নই, আমি এক রাষ্ট্রদূত হতে চাই ।

মোদী-কালমাদী নই, সাধারণ মানুষ আমি,
মারিনি মানুষ, করিনি অর্থের নয়ছয় ---
মরে আজাদ-কিষেনজি, স্ট্যাচু গড়ে বহেন্‌জি
আর কাসবেরও জামাই আদর হয় ।

তবু যত দোষ নন্দ ঘোষ, প্রেমিকা আমার পি. ইয়ং বোস,
আমার ফোনেও পাতা হয় তাই আড়ি,
রাহুলও যায় দলিতের ঘরে, খায় সেঁকা রুটি কড়কড়ে
আর বাড়ি ফিরে এসে ইটালিয়ান কারি ।

এ. রাজা-কানেমাঝি নই, আমি শ্রী নিবারণ মাঝি,
করিনি কোনো স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি,
পেট্রোলে কমে ভর্তুকি আর বারে নাচবেনা নর্তকী,
তবু আই.পি.এল-এ চিয়ার লিডার দরকারী ।

পড়াশোনা উঠেছে লাটে, চীনা মেয়ের সাথে প্রেম হয় চ্যাটে,
বাবা-মার তাই কমাতে পারিনা রোষ ---
শেষে আমি বুঝিয়ে বলি, মা চীনা- বাবা বাঙ্গালী,
তাই মেয়ের নাম পি.ইয়ং বোস ।

বাড়ীতে না হয় বোঝানো গেল, বিপর্যয় তবু নেমেই এল,
ভিসা পেতে হয়ে গেলাম নাজেহাল ।
সুইস ব্যাঙ্কে রাখিনি টাকা, চীনে আত্মঘাতী হল প্রেমিকা,
প্রণব বলে, এটাই কূটনৈতিক চাল ।

শেষে আমেরিকা প্রেসার দিল, মেয়েটা কেন আত্মঘাতী হল,
সবকিছু নাকি হয়েছে আমার দোষে ---
কাসবেরও আগে পেলাম বিচার, আমার ঠিকানা হল কারাগার,
আর এ. রাজা এখন পার্লামেন্টে বসে ।
__________________ o___________________

/*  আমি একটা গ্রামের ছেলে , বলা যায় এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে ।
 তো আমার এই কবিতাটা যদি কারও কাছে ন্যাকা ন্যাকা মনে হয় তো
আমার কিছু করার নেই । কিন্তু অন্যান্য গ্রাম্য ছেলের মতোই আমার
ছোটবেলাটা ঠিক এভাবেই কেটেছে ।  */
ছেলেবেলার একাল সেকাল
                             দেবাশিস মাইতি

উড়ে চলে যায় ঘুড়ি হাওয়ার টানে ভেসে ,
লোলখিঁচ দেয় লাটাই মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ,
পেছন পেছন ছুটে চলে কচিকাঁচার দল
কেটে যাওয়া ঘুড়িগুলো কুড়ানোর ছুঁতোয় ।

কাঠবেড়ালি বেয়ে চলে পেয়ারাগাছের ডালে ,
দাঁড়িয়ে দেখছে ছেলেটা বটতলার ঢালে ।
মাথার ওপর ঘোরে দেখ একঝাঁক ফড়িং ,
তাই ধরতে বাচ্চাগুলো লাফায় তিড়িংবিড়িং ।

‘দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল খেলতে যাবি চল্ ’
‘মাংসচুরি  না বউবসন্ত কি খেলবি বল্ ’ ।
পাতালুকানো , কিতকিত বা কানামাছি ভোঁ ভোঁ ,
ভুলেও কেউ ধরতনা ব্যাটবল খেলার গোঁ ।

মন্ডপে কাঠামোয় যবে পড়ে খড়ের আঁটি ,
তবে থেকেই পূজোর আমেজ , পড়ল ঢাকে কাঁঠি ,
ভোর হলেই ছুটতাম , ‘কতটা গড়া হল ঠাকুর ? ’
‘মাটি পড়েনি ?’ ‘রং হয়নি ?’ ‘দূর্ হাত চলেনা কাকুর !’

আজও হয়তো খেলা হয় , পূজোও হয় ,
পড়া নামক খেলা , ঝাড়ি নামক পূজো ।
খেলার মাঠে জমছে আগাছা , চোরকাঁটা ঘাসে ;
‘বিকেলে ছেলের কোচিং ক্লাস , মাইনে দিচ্ছি মাসে ’ ।

এখন আর কাঠবেড়ালির খোঁজ নেয়না কেউ ,
ফড়িংও কমতে কমতে জোনাকি হয়ে গেছে ।
‘বিকেলে খেলার থেকে রকে আড্ডা দেওয়া ভালো । ’
মাঝে মাঝে ভাবি , সবই ঠিক আছে ,
আমার মাথাটাই শুধু খারাপ হয়ে গেছে ।
_______________ o ______________
নতুন ভোরের আশায়
          দেবাশিস মাইতি
পথ চেয়ে বসে আছি আমি
কত শতাব্দী ধরে ---
দেখব এক নতুন ভোর ।
যেখানে কুয়াশার চাদর
মানুষের লজ্জা নিবারক হয়ে দাঁড়াবে ,
শিশিরের বিন্দুকে মনে হবে অচেনা ।
একে অন্যের দিকে
বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকব
আমার মতোই কেউ আছে ভেবে ।
পেটের জ্বালা মেটাব কোনো
ফাস্টফুড নয় – গাছ থেকে পাড়া
টাটকা ফল অথবা ঝলসানো
কাঁচা মাংস খেয়ে ।
যেখানে দ্রুতগামী গাড়ির
বেপরোয়া চালক পিষে দেবেনা
কোনো নবজাতকের দেহ ,
কারণ যানবাহন হবে একটাই –
জন্মসূত্রে পাওয়া নিজের দুটো পা ।
এখনও যদি বুঝতে না পারো ,
তাহলে খোলসা করে বলি –
হ্যাঁ , আমি ফিরে যেতে চাই
সেই আদিমযুগের নিরিবিলি
দিনগুলিতে – যেখানে সংসারের
টানাপোড়েন নেই , চাওয়া-পাওয়া নেই ,
আনন্দে হতাশা নেই , হতাশায় আনন্দ নেই ,
অপরকে ঠেলে সরিয়ে নিজে
সামনে এগোনোর তাড়া নেই
অথবা সামনে এগোতে গিয়ে
পিছলে পড়ারও ভয় নেই ।
সেই নতুন ভোর , সেই কুয়াশার চাদর
দেখার আশায় আমি যখন
ঘুম থেকে উঠলাম –
দেখি , সে ভোর নয় –
সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে
মুচকি হেসেই ডুব দিল
আর জানিয়ে গেল –
বাছা , ঘুম থেকে উঠতে
বড্ড দেরী করে ফেললে
আর এখনও যারা ঘুমিয়ে আছে –
যারা দিনের শেষে ঘুম থেকে ওঠে
আর রাতের অন্ধকারে
অন্যের চোখের ঘুম কেড়ে নেয় ,
গোলা-বারুদে সন্ত্রস্ত করে রাখে সমাজ ,
নিজের হাতের উল্কি আঁকে
অন্যের তাজা রক্তে ,
কোনো সৃষটিশীল মনন নয়
ধ্বংসাত্মক মানসিকতাই যাদের কাছে প্রিয় ,
তারা সংখ্যায় তোমাদের থেকে
অ-নে-ক বেশী – কতজনকে তুমি জাগাবে
নতুন ভোর দেখার আশায় ?
______________ o ______________

                       বাবুদের জলসাঘরে
                              দেবাশিস মাইতি
সারা দেওয়ালটা জুড়ে কিছু রক্তমাখা লেখা
ঢাকা আছে লতাপাতাজড়ানো সে বুকে ,                
ছাদের গলি দিয়ে বিক্ষিপ্ত আলো
উঁকিঝুঁকি মারে তার দেহের আঙিনায় ,
কিছু শেওলা-আগাছা দিয়ে ঢেকে রেখে মেঝে
কোনমতে সে নিজের লজ্জা বাঁচায় ।
তবু বেরিয়ে পড়ে কঙ্কালসম বিদীর্ন তার দেহ ---
সে দেহ নিস্তরঙ্গ আজ নেই হিল্লোল ।
কত ছন্দের নাচ সে নেচেছে বাবুদের তরে ,
আজ কিছু মাকড়সা বুনে গেছে ফাঁদ
তার পায়ে বাজেনা আর নূপুরের রিনিঝিনিঝিনি ,
বদলে সেখানে ডাকে শেয়ালের দল ,
শোনা যায়  পেঁচার চেঁচানি
তার চোখের অদূরে ছড়িয়ে রয়েছে দেওয়ালভাঙা পাথর ,
ভেতরে এলোমেলো বনগাছ আর বটের ঝুরি ,
ফেটে যাওয়া মেঝের রেখাগুলো
মনে করিয়ে দেয় যেন
ভূগোলের মানচিত্রে নীলনদের অববাহিকা
অনেক খুঁজে সেখান থেকে পেলাম আমি ---
কিছু সাপের খোলস , ভেঙে পড়া ঝাড়বাতি আর
একজোড়া ছন্দেভরা পায়ের নূপুর
রেখে এলাম সে নূপুর ,
যদি আজও সে নৃত্য করে রাতের অন্ধকারে ---
দুইশতকাল আগের জমিদারবাড়ির সে জলসাঘরে
_________________ o _________________

No comments:

Post a Comment