Saturday, May 4, 2013

আমার গ্রাম ও আমি


         পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের এক প্রত্যন্ত গ্রাম খন্যাডিহী । আমার নাওয়া-খাওয়া, বেড়ে  ওঠা, শৈশব-কৈশোরের অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই গ্রামকে ঘিরেই । একটা নিরীহ গ্রামে যা যা থাকা দরকার তার থেকে অনেক বেশীকিছু আছে এখানে । আছে একাধিক প্রাইমারী স্কুল, মাধ্যমিক তথা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, ডাকঘর, বাজার, ইংরেজ আমলের ডাকবাংলো এবং কয়েকবছর আগে খোদ একটা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ হয়েছে এই গ্রামেই । শেষ সংযোজন কিছু আধা হোটেল আর এক রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের শাখা । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ায় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁসাই নদীর শাখা আর তার পাশে চিরসবুজ ষাট বিঘার চড়া । গ্রামের গলি রাস্তাগুলো লাল মোরাম অথবা মাটির হলেও প্রধান রাস্তাটা প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনার কল্যাণে পিচঢালা পাকারাস্তা । কয়েক বছর হল এ রাস্তার ওপর দিয়ে কিছু মিনিবাসও চলাচল শুরু করেছে জেলার সদর শহর তমলুক অবধি আর বাসগুলো ছাড়ে আমাদের গ্রামের বাসস্ট্যান্ড থেকেই । তাই আমি আমাদের গ্রামটাকে নিছক এক অজপাড়া-গাঁ নয়, এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম বলেই ভাবি । তবে এটা একান্তই আমার নিজের ভাবনা ।
         এই গ্রামের অর্থনীতি একসময় প্রায় পুরোটাই কৃষিনির্ভর ছিল, এখনও তাই ; তবে তার পাশাপাশি কিছু লোকাল শিল্পও পরিবারগুলোকে আরও স্বচ্ছল করেছে । বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এ গ্রামের এবং পাশাপাশি আরও কিছু গ্রামে যে শিল্প মানুষকে স্বচ্ছলতা দিচ্ছে সেটা হল অগণিত হোসিয়ারী কারখানা । এর আগে এখান থেকে ছেলেরা কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিত মূলত সোনা ও ফুলের কাজে, কিন্তু এখন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসছে এই হোসিয়ারী শিল্পের দৌলতে, এতে মায়েদের মুখেও হাসি ফিরে আসছে ছেলেরা কাছে থাকায় । এছাড়া আমাদের গ্রাম থেকে বড় হওয়া ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক বা অন্যান্য চাকুরিজীবি মানুষের সংখ্যাও কম নয় ।
       এরই মাঝে এগ্রামের কিছু ব্যতিক্রমী ধন্যি ছেলেও আছে যারা নিজেদের অধ্যাবসায় আর ভগবান-প্রদত্ত কিছু ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে এই গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে । তারমধ্যে প্রথমেই মনে পড়ে চিত্রশিল্পী পরেশ হাজরার কথা । তিনি কি করেছেন বা কি করেন তা নিয়ে যদি সামান্য কৌতূহল হয়, তবে তার ওয়েবসাইট www.pareshhazra.comএ গিয়ে দেখে নাও । এত স্বনামধন্য মানুষ হয়েও এতটাই down to earth যে তার About Me –তে গিয়ে নিজের গ্রাম খন্যাডিহীর কথা ঠিক উল্লেখ করেছেন । তবে আমি স্বীকার করছি, আমার গ্রামের ইতিহাস নিয়ে আমার ধারনাও খুব দুর্বল, তাই আরো কেউ থেকে যেতেই পারেন যে একইরকম স্বনামধন্য, কিন্তু আমার সীমিত জ্ঞানের পরিধিতে আমি উল্লেখ করতে ভুলে যাচ্ছি । দ্বিতীয় যার কথা মনে পড়ে তিনি হলেন ক্ষুদিরাম রাউথ । তিনিও এক রত্ন এবং গ্রামের জন্য কিছু করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন । তিনি একসময় একাধারে জলপাইগুঁড়ি জেলার Additional District Magistrate এবং অন্যধারে  North Bengal State Transport Corporation -এর Managing Director  ছিলেন । সেইসময় তিনি ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে এলাকার মানুষের সুবিধার্থে সরাসরি ধর্মতলা-খন্যাডিহী বাস চালু করেছিলেন । যদিও পরে কোনো কারণে সেটি চলা বন্ধ হয়ে যায় । তবে তখন তাঁর এই চেষ্টা চিরকাল মনে রাখার মত । এভাবেই আরও অনেক মানুষ আছেন যারা গ্রামের মধ্যে থেকেই গ্রামের উন্নতিতে নীরবে কাজ করে গেছেন বা আজও যাচ্ছেন যাদের নাম নেওয়া শুরু করলে আমি আমার এ লেখা শেষ করতে পারবনা ।
         এবার খুবই সংক্ষেপে আসি নিজের কবিতার কথায়, কেননা দিনের শেষে এটা আমার কবিতার Home Page। আমি ছোটবেলা থেকেই কি চাইছি সেটা গুছিয়ে বলতে পারতামনা, তবে গুছিয়ে লিখতে পারতাম । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় , আমার ক্লাস এইট অবধি লেখা কবিতাগুলো তেলেভাজার দোকানের ঠোঙা হয়ে গেছে । আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতা আমার মাধ্যমিক স্কুলের ‘অনির্বাণ’ পত্রিকায় । তারপর প্রধান শিক্ষকের অবসরের জন্য প্রকাশিত পত্রিকায় আমার দুপাতার একটা কবিতা ছাপা হয় । এরপর প্রকাশিত হয় আমার কলেজের পত্রিকা ‘CORONA’–তে, 3rd year-এ একসাথে চারটা কবিতা ছাপা হয় । তখন খুব ভালো লেগেছিল, কিন্তু স্টেজে উঠলে সব গুলিয়ে যেত, তাই নিজের কবিতা কোনদিন পড়তে পারিনি । ইউনিভার্সিটিতে ফেস্টের সময় একটা পত্রিকা ছাপা হত, সেখানে 2nd year –এ আমার একটা কবিতা প্রকাশিত হয় ।
         এই স্কুল-কলেজের বাইরে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘রোদ্দুর সাহিত্য পত্র’ বলে এক পত্রিকার ১৪১৯ পূজাসংখ্যায় এবং এটা প্রকাশিত হয় আমার ইউনিভার্সিটির এক বন্ধুর প্রচেষ্টায় । এবং তারপরেই একটা কবিতা প্রকাশিত হয় ওই পত্রিকারই ১৪২০ নববর্ষ সংখ্যায় । সত্যি বলছি, আমি নিজে থেকে কোনদিন কোনো পত্রিকার (যেমন- আনন্দলোক, দেশ, আনন্দমেলা ইত্যাদি) ঠিকানায় নিজের কবিতা পাঠিয়ে দেখিনি যে আদৌ আমার লেখাগুলো পাতে দেওয়া যায় কিনা । আসলে যেদিন থেকে এই ব্লগ খুলেছি, কবিতাগুলো পত্রিকায় পাঠানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি; কিছুজনতো ( বেশিরভাগই আমার ব্যক্তিগত চেনা বন্ধু ) একটু সময় করে আমার লেখা পড়ছে, এটাই অনেক । কবিতা লিখে আমি কোনো খ্যাতি চাইনা - কারণ এটা আমার নেশা, পেশা নয়; যেদিন পেশা মনে করব সেদিন নিজেই বিভিন্ন পত্রিকার ঠিকানায় হন্যে হয়ে ঘুরব একটু পরিচিতির আশায় ---- 
                                                                                   ধন্যবাদ ।
--------------------------------------------------------------- o ----------------------------------------------------------------