কাদা-মাখা পথে
দেবাশিস মাইতি
মেঘলা ভোর ;
কাল সারারাত
বৃষ্টি পড়েছে অঝোরে ---
তুমি হয়তো গভীর
ঘুমে তোমার বিছানায়, চাদর জড়িয়ে ।
বাড়ির ছাদে একলা
বসে আমি ।
পাশের রাস্তায়
নিত্যদিনের কাজে যায় মানুষের দল ---
আমার আর পাঁচটা
দিনের মতো ব্যস্ততা আজ নেই,
তাই তাদের দিকেই
চেয়ে থাকি ।
মাটির রাস্তায় জল
জমেছে ।
কাদা প্যাচপ্যাচে
কি বিচ্ছিরি অবস্থা !
তবু কারও চোখেমুখে
একফোঁটা বিরক্তি নেই ।
তোমাকে নিয়ে কাল বেরিয়েছিলাম শপিংমলে ;
শহর কলকাতার
বুকে, চোখে সানগ্লাস ---
রাস্তায় দুপা
হাঁটতে গিয়ে তুমি জাস্ট হাঁফিয়ে উঠেছিলে ।
আজ দেখ ভোর গড়িয়ে
সকাল হয়ে গেল,
বোঝাই গেলনা ।
আসলে পাড়া-গাঁয়ের
পরিবেশটাই আলাদা ।
তোমাকেও একদিন
আসতে হবে আমার সাথে ---
ভেজা মাটির গন্ধ
নিয়ে,
পাড়ার গুমটির আঁচে
বসানো চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে,
পুকুরের ঝামা
দেওয়া সিঁড়িতে শাড়ির আঁচল নিংড়ে
মুখ মুছিয়ে দেবে
নধর শিশুর ---
খুব দুষ্টুমি
করলে বাঁশের কঞ্চি কেটে দেব,
পরক্ষণেই কিন্তু
কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরতে হবে সোহাগে ---
দেখেছ, কেমন
নিজের অজান্তে তোমাকে নিয়ে
স্বপ্ন দেখা শুরু
করে দিয়েছি !
জানি, এসব শুনে
তোমার পিলে এতক্ষণে চমকে উঠেছে ।
তবু একবার আমার
সাথে গ্রামে এসে দেখ,
এত ভালোবাসা তুমি
আর কোথাও পাবেনা ।
__________________
o __________________
ঝাপসা
দেবাশিস মাইতি
তার অবাক দুই
চোখে ঘুমভাঙা আলমোড়া,
পাশ ফিরে শুই ।
স্বপ্নমাখা
বালিশের তুলো ভেসে যায়
তার নখপালিশের
গন্ধে ।
দুহাতে ঢাকা মুখ
অপেক্ষা করে স্পর্শের,
হাত বাড়িয়েও
পারিনা ছুঁতে ।
জলের বু্দবুদে
ভেসে ওঠে তার হাজারটা মুখ,
আমার আর মুখ ধোয়া
হয়না ---
এসবই টুকরো
অনুভূতি,
ভুলতে চাইলে আরও
বেশী মনে আসে ।
তাই একে কবিতায়
বাঁধতে চাওয়া বৃথা ---
তাকে ফিরে পাওয়ার
চেষ্টা আর ভাল লাগেনা,
তাই স্মৃতিটুকুই
বেঁচে থাক -- চলমান অমলিন ।
__________________
o __________________
পথের ডাকে
দেবাশিস মাইতি
পথে নামো বন্ধু ।
আমি কবি,
একটুকরো কাগজে
বুক ফুলিয়ে কিছু লিখে দিলাম ---
এতে সমাজের
এতটুকুও উপকার হয়না ।
প্রতিবাদটা করতে
হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে,
মানুষের ভিড়ে
পায়ে হেঁটে ---
সেটাও স্রোতের
তোড়ে পেছন থেকে কেউ ঠেলে দিলো বলে নয়,
বিবেকের যাতনা
থেকে, অন্তরের জ্বালা থেকে,
চোখের সামনে যে
অন্যায়গুলো খোলা চোখে তুমি দেখছো-
তার বিরুদ্ধে
ঘৃণা থেকে ।
একি শুধু অন্যায়
!
চারিদিকে যেটা
হচ্ছে সেটা এককথায় সামাজিক অবক্ষয়
যা সমাজের
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, শিরায়-শিরায়
এত সুচারুভাবে
মিশে গিয়েছে যে
মানুষ
নির্বিকারভাবে বলছে -
‘ওঃ এটা অন্যায়
ছিল, ভাগ্যিস মনে করালেন ’।
কর্মক্ষেত্রে
স্বজনপোষন,
বাঁচার জমি কেড়ে
শিল্পপতিদের জলের দামে দেওয়া,
বস্তিতে আগুন
লাগিয়ে প্রমোটারদের হাতে তুলে দেওয়া,
নিরীহ অসুখে হাসপাতালের
ডাক্তারবাবুর চেনাশোনা দুর্মূল্য ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখে দেওয়া,
বিভিন্ন সরকারী
প্রকল্পের দূর্নীতিতো
উপরতলা থেকে
নীচতলা অবধি দূরারোগ্য ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে,
আর কত বলব ---
এখানে বাড়িতে
মেয়ে হলে ব্যাঙ্কে টাকা জমানো শুরু করে
বিয়ের পর
শ্বশুরবাড়ির মন পেতে হবে বলে,
এমনকি রাস্তায়
দাঁড়িয়ে একদল গ্যাংরেপ করে
তাও হাসতে হাসতে
ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে ---
এ কোন্ সমাজে বাস
করছি আমরা ?
প্রতিবাদ করবো তো
কার কাছে করবো ?
ঘুণ তো ধরে
গিয়েছে সর্বত্র ।
এখানে এম.পি.দের
বেতন পাঁচগুন করার বিল
তারাই পাশ করে
তাও রাতারাতি এক সপ্তাহের মধ্যে
আর তাদের
দূর্নীতি রোধে জনলোকপাল বিল
চল্লিশ বছরেও এ
টেবিল থেকে ও টেবিল ঘুরে বেড়ায়,
পাশ আর হয়না ---
এরপরেও বলছি পথে
নেমে প্রতিবাদ করতে ।
জানিনা সে
প্রতিবাদের ফল কি হবে ,
সেই শিল্পপতিরা,
প্রমোটাররা, ভুঁড়ি বাগিয়ে ফেলা জনপ্রতিনিধিরা
হয়তো গুন্ডা-পুলিশ
লেলিয়ে দেবে সেই প্রতিবাদী কন্ঠগুলো চেপে ধরতে ---
কিন্তু তারপরেও
বলছি, এ ঘুনধরা সমাজকে এখনই যদি
অক্সিজেন না
দেওয়া যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতের
কালো দিনগুলো
চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ---
খোলা রাস্তায়
লুঠতরাজ, খুন-খারাপি, রাহাজানি, শ্লীলতাহানি
আর ঠেকানো যাবেনা
।
এসো, আরেকবার পথে
নামি,
শেষবারের মতো
চেষ্টা করে দেখি ---
দুটো শুকনো
কবিতায় কিছু হবেনা,
বাড়িতে বসে
ফেসবুকে দুটো বিদ্রোহী পেজে লাইক করেও কিছু হবেনা,
এত চেষ্টার পরেও
যদি তোমার রক্ত এখনো না ফুটিয়ে তুলতে পারি,
তাহলে দোষটা আমার
নয়,
তুমিও হয়তো সেই
ঘুণধরা ভুঁড়ি বাগিয়ে ফেলা দলেই নাম লিখিয়েছো ।
থাক্, তোমাকে আর
কষ্ট করতে হবেনা ---
আমি পথে নামবো
আমার রক্ত টগবগ করা বন্ধুদের পাশে নিয়েই,
তুমি নাহয়
ট্যুইটারে ট্যুইট কোরো আমার রক্তমাখা দেহটা খবর হয়ে গেলে ।
_________________________
o ________________________
বোবা
দেবাশিস মাইতি
একটা ছেলে
প্রতিবাদ করেছিল ---
মেরেছিল ঠাস করে
একটা চড় আর বলেছিল
‘বাড়িতে মা-বোন
নেই ?’
সে রাতে তার বোন
অক্ষতই ছিল,
শুধু কিছু কুকুর-শেয়ালে
ছিঁড়ে খেয়েছিল সে প্রতিবাদীর দেহ ।
পুলিশ এসেছিল
সেখানে, ঠিক যেভাবে বস্তিতে আগুন লাগলে
সরকারি দমকল
সময়মতো আসে প্রমোটারদের সাথে নিয়ে,
ঠিক সেভাবেই ---
প্রত্যাশিতভাবেই
কেউ ধরা পড়েনি ।
এভাবেই প্রতিদিন
কত বোনের ইজ্জত বে-আব্রু হচ্ছে,
সবার চোখের
সামনেই হচ্ছে ---
কেউ আর প্রতিবাদ
করেনা ।
আজ আমিও রাস্তায়
দাঁড়িয়ে কিছু কুকুরের পরকীয়া দেখলাম ।
জানি, এতে আমার
কাব্য হয়তো নোংরা হচ্ছে,
কিন্তু ওদের
চামড়া এতটাই মোটা
যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে
ওরাও কুকুর খুঁজছে নিজেদের মানুষ ভেবে ---
ক্ষনিকের জন্যও
নিজের দিকে তাকাচ্ছেনা, অন্তত একবার আয়নার কাঁচে ।
এদের কি করা উচিত
আমি জানিনা ---
সত্যিই কি জানিনা
নাকি জানলেও বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি ।
আসলে ভয় পাচ্ছি
পাছে এর বেশি মুখ খুললে
আমারও সেই
প্রতিবাদীর দশা হয় !
সমাজের যা
পরিস্থিতি তাতে আমাকেও হয়তো নতুনভাবে
চুপ করে থাকা
শিখতে হবে,
কেননা অনেককাল
আগেই কোনো মুনি-ঋষি বলে গেছেন ---
বোবার কোনো শত্রু
হয়না ।
__________________
o __________________
সখের কবি
দেবাশিস মাইতি
কবিতা যারা লেখে
তারা কি সত্যিই আঁতেল হয় ?
এই যে ঘর-বাড়ি,
আকাশ-নদী, পাহাড়-বন ---
তারা তো রোজ যেমন
থাকার তেমনই থাকে,
তারা তো কারও
কানে কানে এসে কখনো কিছু বলে যায়না !
অথচ কবিরা মাথায়
কিছু না এলে স্বার্থপরের মতো তাদেরকেই
নিজেদের
ভোগ্যবস্তু করে নেয় বাজারে তার কবিতা বেচবে বলে ।
চাঁদ-তারা-সূর্যের
মুখে নিজের ভাষা লাগিয়ে
দিব্যি সেগুলোকে
তাদের মনের কথা বলে চালিয়ে দেয় ।
এদের কি সত্যিই
খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই
ঘরের খেয়ে বনের
মোষ তাড়ানো ছাড়া ?
যদি কারও সমুদ্র
ভালো লাগে সে ঢেউ গায়ে মাখবে,
যদি কারও পাহাড়
ভালো লাগে সে পাহাড়ে চড়বে,
সূর্য ওঠা, সূর্য
ডোবা দেখতে চায় দেখবে,
ভ্যাপসা গরমে ঘেমে
গেলে নদীর ধারে হাওয়া খেতে যাবে ---
কিন্তু আমি খুঁজে
পাইনা এই সাধারন ঘ্টনাগুলোকে নিয়ে
এত নাটক করার কি
আছে, এত ভনিতার কি আছে,
এত আদিখ্যেতার কি
আছে ---
মানুষের নিজের
জীবনে অনেক ঝামেলা আছে,
সমাজে শোষিতের
প্রতি শাসকের প্রতিনিয়ত বঞ্চনা আছে,
ছেঁড়া কাপড়ে
স্ট্রীটলাইটের নীচে আধপেটা
খাওয়া মানুষের
গোঙানি আছে ---
এগুলো কি কখনো
সেইসব কবিদের কানে বাজেনা ?
নদী-নালা,
গাছ-পালা, সূর্য-তারা যেমন আছে থাকতে দাও ।
তুমি একটা মানুষ
হয়ে যদি সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের
চরম স্বার্থপরতার
বিরুদ্ধে কলম না ধরতে পারো,
তবে চিরকাল ওই
চাঁদ-তারা-সূর্যকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে
রূপকের আড়ালেই
থেকে যাবে,
কোনোদিন সাধারন
মানুষের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারবেনা ।
আর সবথেকে ভয়ের
কথা কি জানো ---
একদিন এমনও আসবে
যেদিন নিজের
কবিতা তুমি শুধু নিজেই পড়বে ,
চাঁদ-তারা-সূর্যরাও
আর তোমার পাশে থাকবেনা,
কারণ তাদেরও হৃদয়
আছে, হৃদয়ে মমতা আছে ।
তুমি তো সখের কবি
---
তোমার কি আছে
কিছু শুকনো কবিতা ছাড়া !!!
___________________
o __________________জয় গোস্বামী এবং
দেবাশিস মাইতি
মাথায় উঠেছে একটা
কবিতা লিখব ---
তাই দুদ্দাড় করে
ঘরের দরজা খুলে ঢুকে
এখন দুহাত দিয়ে
নিজের মাথা চুলকোচ্ছি ।
একটা বাংলা
দৈনিকে রোববারের ক্রোড়পত্রে
এইমাত্র জয়
গোস্বামীর লেখা বারোটা কবিতা গোগ্রাসে গিলে এলাম ।
ভাবলাম একসাথে
এতগুলো পড়লাম যখন
একটা তো কিছু
লিখতে পারবই ।
কিন্তু কবিতা তো
আর রান্নার ব্যঞ্জন নয়
যে উপকরণ-প্রণালী
সবই ক্রোড়পত্র থেকে হুবহু ঝেঁপে দেব
ওভেনের মাথায়
বসানো গরম কড়াতে !
কবিতার নুন, তেল,
ঝাল-মশলা যদি কিনতে পাওয়া যেত,
তাহলে জয়
গোস্বামী এখন ঘরের দাওয়ায় বসে হুঁকো টানতো আর
রবীন্দ্রনাথের এক
লাইনের সাথে
জীবনানন্দের
দুলাইন পাঞ্চ করে
বেশ একটা নতুন
সুস্বাদু ব্যঞ্জন বানিয়ে
আমাদের পরিবেশন
করত ।
কবিতা ব্যঞ্জন নয়
বলেই জয় গোস্বামীরা আজও কবিতা লেখেন
আর আমরা সেগুলো
গোগ্রাসে গেলার পর ভাবি
উফ্, কি দারুন হজম হবে,
উফ্, কি দারুন হজম হবে,
কাল ঘুম থেকে উঠে
আমিও এরকমই লিখব ।
জানি, চিরকাল
এরকম ভেবেই যাব,
কখনো দুলাইন আর
লিখে উঠতে পারবনা ।
___________________
o __________________
সপ্তম আশ্চর্য
দেবাশিস মাইতি
তুই মানুষ না তার
থেকেও বেশী কিছু – আমি জানিনা,
তুই আমার মতো
বাউন্ডুলের কাছে ভগবানের নজরানা ।
হয়তো ভেসে যেতাম
অন্ধকারের চোরাস্রোতে তোর দেখা না পেলে,
তোর আদর্শই আজ
আমার কাছে নতুনভাবে বাঁচার প্রেরণা ।
…………………
ধুস্, আমি এখানে
কোনো গান লিখতে বসিনি ।
এবার যা বলব সেটা
কঠিন বাস্তব ---
আমার কবিতাগুলো
একটাও মনগড়া নয়,
সবগুলোই নিজের
জীবনের উপলব্ধি থেকে লেখা ।
নিজের জীবনকে
নিয়ে আমি রীতিমতো
ছেলেখেলা করে
গেছি শুধু বাস্তব অভিজ্ঞতা
থেকে কবিতা লিখব
বলে ।
আমার কবিতায়
প্রেমের থেকে বিরহ বেশী,
কারণ – মেয়েদের
মনের সাথে কোনোদিন
নিজেকে খাপ
খাওয়াতে পারিনি ।
জীবনে চলার পথে
বিভিন্ন সময়ে
সাতজন নারী আমার
জীবনকে
নানাভাবে নাড়িয়ে
দিয়ে গেছে ---
সুদেষ্ণা, দেবজিতা,
দেবরূপা, সুতমা, ইপ্সিতা, তুলিকা আর ____ ।
নিজেকে আজ তাই
সপ্তম আশ্চর্য বলেই মনে হয় ।
এরা হয়তো কেউ
প্রেম দিয়েছে, কেউ নিয়েছে,
কারও সাথে
দেওয়া-নেওয়া দুটোই হয়েছে,
কেউবা কেবল
ছায়াসঙ্গী হয়েই থেকে গেছে ---
কিন্তু দিনের
শেষে এরা কেবল আমার
কবিতা লেখার
অনুপ্রেরণা মাত্র ।
কিন্তু এতসবের
মাঝে যেটা নীরবে হয়ে যাচ্ছিল
সেটা হল নিজেকে
ক্রমশঃ ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া ।
ইঞ্জিনিয়ারিং-এর
ছাত্র, তাই কিছু গুন তো থাকবেই;
মদ-গাঁজা-ডেনের
নেশা তিলে তিলে আমায়
ঠেলে দিচ্ছিল
মৃত্যুমুখে, আজও হয়তো দিচ্ছে ---
কিন্তু একজন আমার
জীবনের চিন্তাধারা হঠাৎ বদলে দিয়েছে ।
সে আমাকে প্রেম
দেয়নি,
সত্যি বলতে তার
প্রেম চাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই ।
বলে রাখি – সেও
ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট ;
কিন্তু আর পাঁচটা
ছেলে-মেয়ের মতো
স্রোতের
হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেওয়া মেয়ে সে নয় ।
ছোটোবেলা থেকেই
সে নিজেকে যুক্ত রেখেছে
সমাজসেবার কাজে –
সে সেবার তালিকাও দীর্ঘ ।
আমার মতো প্রেম
নিয়ে খেলা করে
কবিতা লিখতে
চাওয়া ছেলে তার সাথেও
হয়তো ওই একই খেলা
খেলতে চেয়েছিল ---
কিন্তু আজ আমি
তার মূল্যবোধের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছি ।
তাই আমি আজ আর
তার প্রেম প্রত্যাশা করিনা ।
তাকে ধন্যবাদ
জানাই আমার জীবনের চিন্তাধারাটা পাল্টে দেওয়ার জন্য,
আমায় আবার নতুন
করে পথ দেখানোর জন্য ---
তোমরা হয়তো জানতে
চাইবে কে সেই জন ?
থাকনা সে কথা, সে
নিজেই চায়না কেউ জানুক তার নাম,
সে কেবল নীরবেই
কাজ করে যেতে চায় মানুষের জন্য ---
আমার জীবনে সাত
নম্বর নারীর শূণ্যস্থানটা তাই তারই জন্য রাখা ,
এ কবিতার প্রথম
চার লাইনও তারই জন্য লেখা ।
___________________
o __________________
আলো-আধাঁরি
দেবাশিস মাইতি
আমি আড়ালে থাকতে
চেয়েছিলাম, অন্ধকারে নয় ---
যেখানে আলো
থাকবে, কিন্তু আমি হব একা,
আয়নার সামনে
নিজেকে বারবার ফিরে দেখা,
আমার মুখোমুখি
শুধু আমি, ভাঙাচোরা আমি ।
আবেগের সাতকাহনে
কিছু ভুলতে চাওয়া মুখ
কেড়ে নিয়েছে
অনেককিছুই, পাইনি যা চেয়েছিলাম
নিজের করে নিতে, কার
দোষ-কি ছিল উপায়
জানতে চাওয়া
বৃথা, দিনের শেষে একাই ছিলাম
একাই থেকে গেছি
আর তাই এখন
আমার মুখোমুখি
শুধু আমি, কোনঠাসা আমি ।
তবুও আমার আড়ালে আর
থাকা হলনা,
তলিয়ে গেলাম
বিনিদ্র অন্ধকারের পাঁকে ---
যেখানে আগে থেকেই
দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে
আমারই মতো কিছু
অন্ধকারের যাত্রী,
আমিও যোগ দিলাম
তাদের দলে আর সেখানেও
আমার মুখোমুখি
শুধু আমি, নেশাগ্রস্ত আমি ।
এই নেশাই উগরে
দেয় কিছু ছাইচাপা সত্যিকে,
ভাবি আবার ফিরে
পাব কারও মধ্যে তাকে,
নতুন করে ঝাঁপিয়ে
পড়ি নতুন উদ্যোগে ---
কিন্তু সেও কেবল
সান্ত্বনা দেয়, বেরিয়ে আসতে বলে
অন্ধকারের গলি
ছেড়ে, কিন্তু নতুন পথের দিশা
সেও পারেনি
দেখাতে, তাই আলোর খোঁজে ছুটতে গিয়ে
আমার মুখোমুখি
শুধু আমি, দিগ্ভ্রান্ত আমি ।
___________________
o _________________
বাঙালী ভ্যালেন্টাইনস্ ডে
দেবাশিস মাইতি
ভেবেছিলাম বিদ্যে
পাব তোমার আরাধনায়,
শুভ্র বেশে তোমায়
দেখে মন হবে কুসুমিত ।
নিষ্ঠাভরে তোমার
চরণে দেব মা অঞ্জলি,
জ্ঞান-শিক্ষা-আলোয়
হবে আগামী বিকশিত ।
শুধু এটুকুই তো
ছিল মনে ;
এভাবেই তো তোমার
চরণে
করেছি পুষ্প নিবেদন
বছরে একদিন,
বইপত্র ছুটি দিয়ে সাময়িক স্বাধীন
---
এভাবেই তো . . . . . . . .
কিন্তু হঠাৎ দেখি
বছর কয়েক পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি ।
শাড়ির ভাঁজে ঝাড়ি
মারার হাজারো প্রয়াস,
একটু উঁকি, একটু
ঝুঁকি, ‘পেছন ফিরে দেখল নাকি ’ !
চুল সরিয়ে কপাল থেকে আড়চোখে আভাস ।
আর পারিনা ---
মাগো তোমার প্রতি মনঃসংযোগ এরা
করতে দেবেনা ।
যেদিকে তাকাই দেখি লাল-নীল-হলুদ-সবুজ
পরীরা যাচ্ছে ভেসে ভেসে,
হয়তো তোমায় খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে
ফেলেছে রাস্তা;
নাকি প্রকৃত ভক্ত খুঁজতে তোমাকেও
পথেই নামতে হবে !
তুমি কি মা প্রেমের দেবী ?
নইলে সবাই কেন ঘুরছে আজ হাত ধরাধরি
করে !
পারলে তোমার হাত থেকে বই সরিয়ে
এরা লাল গোলাপ ধরিয়ে দিতো ---
হয়তো তাই দেবে আর কয়েকবছর বাদে,
সরস্বতীপূজো হয়ে গেছে বাঙালী
ভ্যালেন্টাইনস্ ডে ।
________________________ o ____________________________একটা কবিতা আর কয়েকটা ছবি
দেবাশিস মাইতি
তোমার কালো চুলে
ঢেকে থাকা ব্যস্ত কানের দুল
আর চোখে ভাসে
স্বপ্ন নাকি আমার বোঝার ভুল ---
শুধু একবার ছুঁয়ে
দেখা গেলে থাকতনা সন্দেহ,
একরাশ মিথ্যে
আঁকড়ে ভাবি তুমি আমি একদেহ ।
জানি চাইলেই তো
আর সবকিছু পাওয়া যায়না ।
তবু যাকিছু আমার
ছিল সেটুকু খোয়ানোর গ্লানি,
একটা মেঘলা
বিকেলে শেষ সূর্যের ঝলকানি,
তোমার ব্যালকনির
ঘেরাটোপ ডিঙানোর সাধ্য আমার নেই ---
তাই নদীর ধারে
আমি হাঁটব একা,
তুমি চাইলে
বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকো,
তোমার ওড়নার
ফাঁসে আমায় আর জড়িয়োনা,
জানি তোমার হাতেই
লেখা আমার মৃত্যু পরোয়ানা ।
তোমার চোখের ওপর
চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়ার ক্ষণ,
আমি হাতড়ে বেড়াই
অন্ধকারে, খুঁজি তোমার মন ।
তোমার আলতো
ছোঁয়ায় নতুন করে খুঁজি নিজেকে,
আমার ছেঁড়া জামা নেকড়া হয়ে মুছে দেয় মেঝে ।
আর বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধে ঘাস ছুঁয়ে যায় ফড়িং,
পেটের টানে
অরণ্যের বাঘ খুঁজে বেড়ায় হরিণ,
তাই আজও আমি তোমার
টানে নদীর ধারে যাই
আর স্রোতের জলে
নিজের ছায়ায় সান্ত্বনা খুঁজে পাই ।
তুমি বেশ করেছ
অবশ মনে দিয়েছ তোমার সব ---
তাই আঘাত দেওয়া
তোমারই সাজে,
আমি দশটা-পাঁচটা
কাজে যতই ডুবে থাকি তবু
যেন একটা কিছু
আজও বুকে বাজে ।
তুলির টানে হলুদ
ফড়িং চুমু খেয়ে যায় ঘাসে,
আমার রংচটা বইয়ের
পাতায় মোনালিসা হাসে,
গাছের পাতায় ছায়া
খোঁজে নীড়হারা দুই পাখি,
আমার দমবন্ধ করে
তুমি বাঁধলে হাতে রাখি ।
_____________ o _____________
তুমি আছ তাই
দেবাশিস মাইতি
ভাঙা টালির ফাঁক
দিয়ে আধফালি চাঁদ
আবছায়া আলো ফেলে
যায়,
আর ভোরের প্রথম
আলো চুপিসারে এসে
নাড়া দেয় চোখের
পাতায় ।
তবু ঘুম ভেঙে যখন
তোমায় চেয়ে দেখি,
ভুলে যাই রাতের
সে চাঁদ ---
জানি মেটাতে
পারিনি আমি এতটুকু সখ,
দিতে পারিনি মাথা
গোঁজার ছাদ ।
তোমার নরম হাতের
আলতো ছোঁয়া,
একটা সিগারেটের
ধোঁয়া,
বাঁচিয়ে রেখেছে
আমাকে ---
নইলে কবেই হয়তো
যেতাম চলে,
সব সীমা ছেড়ে তেপান্তরে,
শূণ্যতা ভরে
দিতাম দুহাতে ।
সারাদিন কাজের
মাঝে ডুব দিয়ে থাকি,
ঝেড়ে ফিরি
রাস্তার ধূলো
আর দিনের শেষে তোমার
আদিখ্যেতায়
বালিশ থেকে বেরোয়
তুলো ।
তবু এইটুকু
স্পর্শ তুমি দিলে বলে
আজও হাতে ধরা নেই
হারিক্যান,
রাতের নিয়ন আলো
চোখ টিপে বলে
তোমার ঘুম ভাঙায়
সিলিংফ্যান ।
তোমার গভীর রাতের
শরীরি ভাষা,
একটা মায়াবী
নেশা,
জাগিয়ে রেখেছে
আমাকে ---
নইলে কবেই হয়তো
গভীর ঘুমে,
চোখের পর্দা আসত
নেমে,
বিদায় জানাতাম
তোমাকে ।।
_______________ o _____________
রোমিও
দেবাশিস মাইতি
তবু তুমিই এখনো
আছ আমার মনে,
কিছুটা হলেও আছ ।
তোমার ছেড়ে যাওয়া
জায়গাটা
আমি আর একা
একজনকে ছিনিয়ে নিতে দিইনি,
যদি সেও আঘাত
করে, তবে আমি কার কাছে যাব ---
তাই এবার
ভালোবাসাটা বিলিয়ে দিলাম
আরও অনেকের মাঝে
---
দেখলাম এটাই বেশ
ভালো ।
এর কিছু মিষ্টি SMS
ওকে,
ওরটা তাকে, তারটা
একে পাঠিয়ে
দিব্যি চালিয়ে
যাচ্ছি,
কেউ টেরও
পাচ্ছেনা – শুধু ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হচ্ছি আমি
আর আমার মুখোশে
ঢাকা ভালমানুষি সত্ত্বা ।
জানিনা এ মিথ্যের
ঘেরাটোপ থেকে কবে বেরিয়ে আসব ।
হয়তো এভাবেই
একদিন ধ্বংস হয়ে যাব আমি ---
নাকি এটাই আসলে
নতুন প্রেমের সংজ্ঞা
Always have a Best Possible
Replacement.
এই মন পরিবর্তনের
যুগে কখন কি হয় কে বলতে পারে !!!
OK......Bye......Take care.....have
a nice day........ :)
_________________o_______________
আম আদমি
দেবাশিস মাইতি
ঘরের এক কোণে আজও
ঘাপ্টি মেরে বসে,
আমারই ভুল নাকি
শুধুই তোমার দোষে
আমি হারালাম
ভালোবাসা---
আর কলেজের
ক্যান্টিনে, ব্যোমকেশ-টিনটিনে
পি.এন.পি.সি-র
মাঝে চিরুনি তল্লাশি করে
খুঁজে পায়না
ঘুঘুর বাসা ।
কেউ যদি ঝেড়ে
কাশে, কেউ বসে কারও পাশে,
লেগে যাবে আরেকটা
বিশ্বযুদ্ধ ।
দলাই-মলাই চলে
ফোনে, চীনে যায় অর্বাচীনে
আর তিব্বতে কাঁদে
গৌতম বুদ্ধ ।
আমার কী যায় আসে
তাতে, রাজনৈতিক আঁতাতে,
আমি শুধু আমার
প্রেম ফেরত চাই ---
গোলাগুলি হোক
সীমান্তে, আমি তোমায় যাবো আন্তে,
রাষ্ট্রদোহী নই,
আমি এক রাষ্ট্রদূত হতে চাই ।
মোদী-কালমাদী নই,
সাধারণ মানুষ আমি,
মারিনি মানুষ,
করিনি অর্থের নয়ছয় ---
মরে
আজাদ-কিষেনজি, স্ট্যাচু গড়ে বহেন্জি
আর কাসবেরও জামাই
আদর হয় ।
তবু যত দোষ নন্দ
ঘোষ, প্রেমিকা আমার পি. ইয়ং বোস,
আমার ফোনেও পাতা
হয় তাই আড়ি,
রাহুলও যায়
দলিতের ঘরে, খায় সেঁকা রুটি কড়কড়ে
আর বাড়ি ফিরে এসে
ইটালিয়ান কারি ।
এ. রাজা-কানেমাঝি
নই, আমি শ্রী নিবারণ মাঝি,
করিনি কোনো
স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি,
পেট্রোলে কমে
ভর্তুকি আর বারে নাচবেনা নর্তকী,
তবু আই.পি.এল-এ চিয়ার
লিডার দরকারী ।
পড়াশোনা উঠেছে
লাটে, চীনা মেয়ের সাথে প্রেম হয় চ্যাটে,
বাবা-মার তাই
কমাতে পারিনা রোষ ---
শেষে আমি বুঝিয়ে
বলি, মা চীনা- বাবা বাঙ্গালী,
তাই মেয়ের নাম
পি.ইয়ং বোস ।
বাড়ীতে না হয়
বোঝানো গেল, বিপর্যয় তবু নেমেই এল,
ভিসা পেতে হয়ে
গেলাম নাজেহাল ।
সুইস ব্যাঙ্কে
রাখিনি টাকা, চীনে আত্মঘাতী হল প্রেমিকা,
প্রণব বলে, এটাই
কূটনৈতিক চাল ।
শেষে আমেরিকা
প্রেসার দিল, মেয়েটা কেন আত্মঘাতী হল,
সবকিছু নাকি
হয়েছে আমার দোষে ---
কাসবেরও আগে
পেলাম বিচার, আমার ঠিকানা হল কারাগার,
আর এ. রাজা এখন
পার্লামেন্টে বসে ।
__________________
o___________________
বয়সের দোষ
দেবাশিস
মাইতি
তোমায় না পাওয়ার আনন্দটা
তোমায় পেয়ে হারানোর থেকে শতগুনে ভালো ।
তুমি বলবে, এসব পরাজিতদের
মনগড়া সান্ত্বনামাত্র –
সে তুমি বলতেই পারো ।
তবে ভেবে দেখলাম,
দূরে থাকলে
তোমায় নিয়ে যতটা ভাবি,
কাছে এলে ভাবনাগুলো
কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় ।
তোমার চোখে চোখ রেখে
হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে,
না, কোনো নীল সমুদ্রে নয়,
ধূসর পাহাড়ের বুকেও নয় –
আমার চিলেকোঠার চার দেওয়ালের মাঝে,
যেখানে থাকবে শুধু তুমি আর আমি
আর আমাদের সুখের মুহূর্তগুলো ।
হয়তো তুমি আপত্তি করবে,
হয়তো কেন সত্যিই আপত্তি করবে ।
সেজন্যই তো আমার ভাবনাগুলো
ভাবনা হয়েই রয়ে যায়
আর মুখবুজে পচে মরে
ডায়েরীর পাতায় ভীষন ভয়ংকর
অপরিপূর্ণ মনোবাঞ্ছারূপে –
এই কবিতাও তেমনই একটা ।
তোমার ছায়াকে জড়িয়ে ধরে
আলিঙ্গন করার মতো ।
থাক, এর বেশী না বলাই ভালো –
নিজেকে চরিত্রহীন করতে কারইবা ভালো লাগে !!!
________________ o _________________
Enjoying The Life
Debashis Maiti
It’s now quite a long days passed
When I had a sound sleep at night,
Something is happening that I can’t explain –
Life being colourful, still background is white.
One thing that I can feel for now,
My head is being controlled by my heart.
Today I am in a fantasy world,
But fear, soon it is going to be desert.
Well, I should not bother about the future,
Enjoying every moment at its fullest –
My present giving all the cheers in life,
Then why think about the past that was coolest !
Seriously, I am now floating in space –
Please, someone help to bring me down.
Every expression contains adverbs & adjectives,
I goanna forget my all the proper nouns.
The nature now doesn’t attract me further.
Who are these moon, sky, sun & streams ?
Once they were all in my depressed world,
Now they are the enemies of my sweet dreams.
I don’t fear now what I will do
When all these happy days will pass –
I know I have a bunch of good friends
Who will give me company with cocktails in glass.
______________________ o _______________________এবার প্রেম
দেবাশিস মাইতি
তুমি বলেছিলে , ভোরের আলো গায়ে মাখলে
তোমার সারাদিন ভালো কাটে ,
লালচে রোদে হলুদ শাড়ি সবুজ ধানের ক্ষেতে ।
তুমি চেয়েছিলে সকালবেলায়
গাঁয়ের মন্দিরে পূজো দিতে ,
ইচ্ছেমতন দু-তিনখানা বর চেয়ে নিতে –
তুমি প্রশ্ন করেছিলে , দুপুরে সূর্য কি
তার রাগ কমাতে পারেনা ?
দেখো , আকাশে মেঘ করেছে , জল আর ধরেনা ।
তুমি বলেছিলে , বিকেলে আমরা
নদীর ধারে বেড়াতে যাবো –
দেখো , চরে কত ফুল ফুটেছে , খোঁপায় লাগিয়ে দেবো ।
তুমি ভেবেছিলে , গোধূলি কাটবে
খুবই বিরক্তিকর ভাবে ,
দেখো , আলো –আঁধারিতে পাখিরা সব
বাড়িতে ফিরে যাবে ।
তুমি বললে , এ কোন্ সন্ধ্যে !
চাঁদ হারিয়ে গেলো কোনখানে ?
আমি বললাম , হারাবে কেন ,
এই তো আমার সামনে ।
তুমি বললে , এত রাত হল ,
কোথায় গেলো আকাশের তারা ?
আমি বললাম , পর্দা ঢেকে দিয়েছি ,
আমাদের প্রেমে ওরা ভাগ বসানোর কারা !!!
_______________ o _____________
দেবাশিস মাইতি
ছিল জীবনটা সাদামাটা আটপৌরে ,
যেন হেরে যাচ্ছি এ যান্ত্রিক দৌড়ে ,
কেউ বয়ে নিয়ে গেলে যেন খুব ভালো হতো ,
শরীর যে আর বইছেনা –
তবু কাজে যেতে হবে ঘুম থেকে উঠে ,
ফিরতে হবে জানি রাত ঘুটঘুটে ,
সময়ের সাথে আপসহীন সমঝোতা
আর তো ভালো লাগছেনা –
হয়ে যাব একদিন দেওয়ালের ছবি ,
রুটিরুজির চাহিদা তবু থাকেনা মুলতুবি ,
নিজের চেহারা আয়নায় দেখতে ভয় করে ,
কাকতাড়ুয়াও হাসি চাপছেনা –
সময়ের সাথে তবু দৌড়ে যেতে হবে ,
থমকালে জনসমুদ্রে দেহ কার্পেট হয়ে যাবে ,
নারকীয় যন্ত্রনা ভোগ করে যাই তবু
কারও প্রিয় হতে পারছিনা –
জীবনযুদ্ধে আজ আমি ক্লান্ত পথিক ,
শুরু করার আগেই হেরে যাওয়ার ভীতি ,
কেউ বলতে পারে আমি পরাজিতের প্রতীক ,
সেই কথা গায়ে মাখছিনা –
বুঝতে পারিনা এই কি বেঁচে থাকার মানে ,
নিজের ইচ্ছেগুলোকে মেরে ফেলা প্রাণপনে ,
আমি ফিরে যেতে চাই আবার স্বপ্নিল জীবনে ,
আর কিছু ভালো লাগছেনা –
______________ o ______________স্বপ্নসুখ
দেবাশিস মাইতি
তুমি কি ভাবো আমি কিছুই বুঝিনা !
তোমার টোলপড়া দুই গালের মাঝের
ঠোঁটের কোণের সলাজ হাসি ,
চোখের চাহনিতে যে অন্তরঙ্গতার
স্পর্শকাতর আমন্ত্রণ ,
কপালের উপর পড়ে থাকা
আলতো চুলের উড়তে থাকা
আমাকে ঘুম পাড়িয়ে নিয়ে
যায় এক অন্য জগতে ,
সে ইন্দ্রপুরীও নয় ,
জগন্নাথের পুরীও নয় ,
সে হল স্বপ্নপুরী –
যেখানে তুমি স্বাধীনভাবে
নিজের ডানায় উড়তে থাকা
এক মোহময়ী পরী ।
হঠাৎ উঠল ঝড় –
এলোমেলো চারিদিক –
অসহায় তুমি , পরীদের দল হতে
বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী দিশেহারা –
তোমার সেই কঠিন মুহূর্তে
তোমাকে কোলে তুলে নিলাম ,
জড়িয়ে ধরলাম আমার
দুহাতের বেষ্টনীতে ,
যেন এ জোড় আর
বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয় ।
ঝড় থেমে গেল ,
প্রকৃতি শান্ত হল ।
স্বপ্নলোককে বিভ্রান্ত করে যখন
জানালা দিয়ে সূর্যের আলো
চোখের পাতা খুলে দিল ,
তখন বিছানাতে একা আমি
আর সারারাতের ঝড়ের সঙ্গী –
কোলে আঁকড়ে রাখা পাশবালিশ ।।
_______________ o ___________
প্রেম যাচাই
দেবাশিস মাইতি
আমি তোমায় নিয়ে
এখনও ভাবতে ভালোবাসি ,
মনের কথা জানাতে আর
লাগবেনা দোভাষী ।
হিজিবিজি নষ্ট চিঠি
লিখবনা লাল কালিতে ,
সাঁতরে পার হব নদী
আটকাবনা চোরাবালিতে ।
এখনও যদি বুঁদ হয়ে থাকো
প্রাণঘাতী দেমাকে ,
জলের হালকা স্রোতে আর
খুঁজতে যাবনা তোমাকে ।
আসুক ঝড় , উড়ে যাক পাতা ,
নেড়া নারকেল গাছ ,
তুমি চাইলে ছিপ ফেলে
ধরব বোয়াল মাছ –
না চাইলে ভেবোনা যেন
গলায় দেব ফাঁসি ,
জীবন আমার একটাই ,
একে বড্ড ভালোবাসি ।
ভেবোনা তোমার শোকে চিরদিন
স্থগিত রাখব বিয়েটা ,
বলতে পারো কে ছিল তোমার
পাশের সীটের মেয়েটা !
রাগ কোরোনা চাইলে তুমি
নাও বলতে পারো ,
তোমার জন্য অপেক্ষা না হয়
করব দিন বারো –
তারপর দেখা হলে বাসে
বোলোনা সীটটা ছেড়ে দিতে ,
ঐ মেয়েটাই থাকবে পাশে
চুলে বাঁধা লাল ফিতে ।
হিংসে কোরোনা just imagine
কেমন হবে সে দৃশ্য –
অগ্নিতে যেন ঘৃতাহুতি ,
ঋতুটাও আবার গ্রীষ্ম ।
চিন্তা কোরোনা রুমাল থাকবে ,
একটা নয় তিনটে ,
তোমার চোখের জল মুছে দেব
ওর ভালোবাসা কিনতে ।
তাও যদি কম পড়ে
Share করে নেব ওরটা ,
তুমিও ফিরে পাবে মনের
হারিয়ে ফেলা জোরটা –
আমার জন্য করবে লড়াই ,
দেখবে সব লোকে –
পকেট থেকে খসবে হাজার
দিতে হবে ওকে ।
তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য
ও তো ছিল dummy ,
আমার কাছে তোমার প্রেমই
সবচেয়ে দামী ।।
_______________ o ______________
Dedicated to all my Batchmates
দেবাশিস মাইতি
যদি ফিরে পাওয়া যেত
হস্টেলের দিনগুলো
কত ভালো হত ।
হারিয়ে গিয়ে বন্ধুদের ভিড়ে
চেনা ঘাসের ভেজা শিশিরে
আড্ডা দেওয়া যেত ।
ভাঙা কার্নিসে মাকড়সার ফাঁদ
আর মদের বোতলে ঘেরা ছাদ ---
দু peg খেয়ে দুঘন্টার বাওয়ালি ,
সবাই ঝিমিয়ে গেলে হঠাৎ কাওয়ালি ,
মশারির এক কোণ খুলেই বিছানা গোটানো ,
হালকা ঘটনাকে রঙ চড়িয়ে রটানো ,
সকালে সুন্দরী কাকি , বিকেলবেলা ঢ্যাপসা ,
হাওয়া খেতাম ঝিলের ধারে গরম পড়লে ভ্যাপসা ,
রাতে ড্রাকুলা কাকার ধাবায় জয় বাবা বোল্ ,
মিনিমার্কেটে গিয়ে কালীমাতার এগরোল ,
Fest-এর রিহার্সালে সব কত না সিরিয়াস ,
তারই মাঝে সময় করে ঝাড়ি মারার প্রয়াস ,
সিগারেটের কাউন্টারে তেড়ে সুখটান মারা ,
Library-তে গিয়ে সব AC-তে প্রেম করা ,
Semester-এ হাতের ফাঁকে হারমোনিয়াম চোথা ,
একজনের প্রেম হলে দশজনের বুকে ব্যাথা ,
PPT দিতে গিয়ে সে কি উত্তাল ছড়ানো ,
Lecture class-এ সহ্য করা ঘুমপাড়ানি পড়ানো ,
কলেজে যেতাম shortcut রাস্তা বাগিয়ে ,
আর মিনিমার্কেটে NGH-এর পাশ দিয়ে ,
সে কথা বলব কি ভাই সবই যেন বিলা ,
রাতে স্ট্রীট লাইটের নীচে রাধা-কৃষ্ণ লীলা ,
সারারাত Fifa আর Counter Strike সঙ্গী ,
ক্যারামে ফিনিশ দেওয়া তেড়ে মেরে বাঙ্গি ,
বিয়ারের গ্লাসে চুমুক মেরে 29 খেলা ,
7th কার্ডে রঙ করে 27 তোলা ,
সারারাত খেলার শেষে দিনের বেলা ঘুম ,
সারা ক্লাস ফাঁকা দেখে স্যার রেগে গুম ,
টুকলিতে বাধা দেওয়ায় ‘দেখে নেব ’ ভাব ,
হম্বি-তম্বি দেখিয়ে শুধু মার দেওয়ার অভাব,
সিনেমা রিলিজ হওয়া মাত্র কপি চলে আসা ,
একসাথে সবাই মিলে সিনেমা দেখতে বসা ,
ভুলে যাই কি করে ভাই জয় ওস্তাদের জয় ,
উভয় সংকটের মাঝেও করেছি এনজয়্ ,
4th year-এ single রুমে enjoy কাকে বলে !
কিভাবে , সেটা বললামনা public space বলে ,
সবাইকে miss করছি , তবু আশায় বাঁধি বুক ---
এখনও বেঁধে রেখেছে আমাদের Orkut, Facebook .
____________________ o ___________________
/* আমি একটা গ্রামের ছেলে , বলা যায় এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে ।
আমার কিছু করার নেই । কিন্তু অন্যান্য গ্রাম্য ছেলের মতোই আমার
ছোটবেলাটা ঠিক এভাবেই কেটেছে । */
ছেলেবেলার একাল সেকাল
দেবাশিস মাইতি
উড়ে চলে যায় ঘুড়ি হাওয়ার টানে ভেসে ,
লোলখিঁচ দেয় লাটাই মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ,
পেছন পেছন ছুটে চলে কচিকাঁচার দল
কেটে যাওয়া ঘুড়িগুলো কুড়ানোর ছুঁতোয় ।
কাঠবেড়ালি বেয়ে চলে পেয়ারাগাছের ডালে ,
দাঁড়িয়ে দেখছে ছেলেটা বটতলার ঢালে ।
মাথার ওপর ঘোরে দেখ একঝাঁক ফড়িং ,
তাই ধরতে বাচ্চাগুলো লাফায় তিড়িংবিড়িং ।
‘দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল খেলতে যাবি চল্ ’
‘মাংসচুরি না বউবসন্ত কি খেলবি বল্ ’ ।
পাতালুকানো , কিতকিত বা কানামাছি ভোঁ ভোঁ ,
ভুলেও কেউ ধরতনা ব্যাটবল খেলার গোঁ ।
মন্ডপে কাঠামোয় যবে পড়ে খড়ের আঁটি ,
তবে থেকেই পূজোর আমেজ , পড়ল ঢাকে কাঁঠি ,
ভোর হলেই ছুটতাম , ‘কতটা গড়া হল ঠাকুর ? ’
‘মাটি পড়েনি ?’ ‘রং হয়নি ?’ ‘দূর্ হাত চলেনা কাকুর !’
আজও হয়তো খেলা হয় , পূজোও হয় ,
পড়া নামক খেলা , ঝাড়ি নামক পূজো ।
খেলার মাঠে জমছে আগাছা , চোরকাঁটা ঘাসে ;
‘বিকেলে ছেলের কোচিং ক্লাস , মাইনে দিচ্ছি মাসে ’ ।
এখন আর কাঠবেড়ালির খোঁজ নেয়না কেউ ,
ফড়িংও কমতে কমতে জোনাকি হয়ে গেছে ।
‘বিকেলে খেলার থেকে রকে আড্ডা দেওয়া ভালো । ’
মাঝে মাঝে ভাবি , সবই ঠিক আছে ,
আমার মাথাটাই শুধু খারাপ হয়ে গেছে ।
/* এই কবিতটা লেখার পর আমার রুমমেট কুমারজিৎকে পড়িয়েছিলাম , তখনই কবিতাটা ওর ভাবনার সাথে মিলে গিয়েছিল , তারপরের ইতিহাস প্রায় সবারই জানা । একটাই দুঃখ , কবিতাটা আমার কোনোদিন কোনো কাজে লাগলনা । যেখানেই প্রয়োগ করেছি ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে । এরপরেও যদি কারও উপকারে লাগে তো খুশি হব । */
ছিল বান্ধবী হল প্রেমিকা
দেবাশিস মাইতি
তুই যখন থাকিস আনমনে ,
দেখেছি তোর চোখে অদ্ভুত গভীরতা ।
তুই যখন কিছু ভাবিস একমনে ,
দেখেছি তোর চোখে একনিষ্ঠ প্রগাঢ়তা ।
হয়তো বলবি আমি শুধুই বন্ধু তোর ,
আমিও ধরে রেখেছি সে বন্ধুত্বের জোড় ।
কিন্তু কতদিন আর শুধু বন্ধু হিসাবে থাকি !
জানি তুই ভালো বন্ধু আমার ,
তাই তোকে বলতে পারছিনা আর
বন্ধু নয় , আমি আজ তোকে অন্য চোখে দেখি ।
জানিনা কিভাবে তোকে বলব সে কথা ,
সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয় আমি পাই ।
কিন্তু বন্ধুত্ব আমার প্রেমে রূপান্তরিত ,
হৃদয়ের ইচ্ছা আমি কিভাবে চেপে যাই !
এই নির্মোঘ বাস্তবে আমার সমস্যা একটাই ,
আমি কি করে বোঝাই তোকে কতটা আমি চাই ।
তুই যখন বলিস কিছু কথা
আমি তোর দিকে উদাস হয়ে তাকাই ,
তোর ঠোঁটের আলতো ভাষায় আমি
জানিনা কোন্ স্বপ্নের দেশে যাই ।
আমার যে কি অনুভূতি আমিই শুধু জানি ,
তোকে বলব কিভাবে তুই যে বড়ই অভিমানী ।
তবুও চাইনা আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যাক নষ্ট ।
হয়তো আবার সেটাই আমি চাই ,
যদি বন্ধুকে প্রেমিকারূপে পাই
শুধু তখনই পাবনা বন্ধু হারানোর কষ্ট ।
মনের কথা আমি তোকে স্পষ্টভাবে বলি ---
কোনো ভনিতা নয় আমি তোকে ভালোবাসি ,
এটা শুনে তুই যদি সম্পর্ক না রাখিস ,
পরোয়া করিনা , কারণ আমি তোকেই ভালোবাসি ।
তুই ঠাট্টা ভেবে দিসনা উড়িয়ে কঠিন সত্য এটাই ,
হয়তো বোঝাতে পারছিনা এখনও , তোকে কতটা আমি চাই !!!!
/* ভাইগণ , Excessive Public Demand-এর জন্য কবিতাটা
মার্কেটে ছাড়লাম । এটা Actually কলেজের Departmental
বন্ধুদের নিয়ে লেখা প্রবন্ধের একটা অংশ ,যে প্রবন্ধটা আর কিছুদিনের
মধ্যেই Upload করব , So Just Wait for that Moment. */
নকশা বলে গদ্দারকে
আমাদের মধ্যে সদ্দার কে ?
গদ্দার বলে নসকারে
জয়ী হবি তুই অস্কারে ।
সেথায় দাঁড়িয়েছিল বাচ্চা ,
বলে আমি জবাব দেব সাচ্চা ।
শুনে রাখ আছিস যত নামজাদা ,
আসল জয়ী দ্য গ্রেট খেঁচাদা ।
সেথায় দাঁড়িয়েছিল সেনা ,
বলে কি হতিস তোরা আমায় বিনা ,
ফলো করে আমার কমান্ড ,
আজ তোদের এত ডিমান্ড ।
সবকিছু শুনছিল গোপাল ,
বলে হায়রে পোড়া কপাল ,
তোর কমান্ড করলে ফলো ,
দিনেও দেখতাম আঁধার কালো ।
চুপ করে সব শুনছিল কাকা ,
বলে একবার তো এদিকে তাকা ,
ভেবে দ্যাখ আমার ক্যাপাটা কি ,
তোদের জন্য আনলাম কাকি ।
সেথায় দাঁড়িয়েছিল টপার ,
বলে আমি থাকতে প্রশ্ন ক্যাপার !
আমায় লাগলে ঢিল-পাটকেল ,
ছুটে আসবে গোটা লেডিস হস্টেল ।
চুপ করে সব শুনছিল জানা ,
বলে এর সমাধানও আমার জানা ,
আসলে জয়ী গোটা আই.টি.
কাঁধে কাঁধ সব মেলারে ভাইটি ,
জানা যা বলে সবে মান্ তা ,
কেননা জানা সবজান্তা ।
_________ o ___________
valo laglo..................
ReplyDeletekhub valo..ja kichu natun likhbi upload korte vulisna.
ReplyDeleteCHILO BANDHABI HOLO PREMIKA ETA KI SUDESHNA KE NIYE LEKHA???????????????????
ReplyDeleteMadhyomiker por sudeshnar sathe r dekha hoyni bhai.... oke to pray vultei bosechhilam..... toke ki mone koratei hoto....!!!!!
ReplyDeletenice one
ReplyDeletekobita gulo khub valo laglo.tomar hay to amak tomar mone nei.ami debasish jana. 1997 e flood er samay tomader bari jetam ludu khelte.tmar mone pore ki?r sabeda khetam.
ReplyDelete